রবিবার

ঢাকা, ২৩ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ


উদ্যোগ

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বুয়েটের ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’ পুরস্কার পেল ৫ হাজার মার্কিন ডলার

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দুপুর ১২:৪০

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ার শিপবিল্ডিং ইনস্টিটিউট অব পলিটেকনিক সুরাবায়া এবং আইটিএস ইন্দোনেশিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়াকে টপকে দেশের সুনাম ছড়িয়েছে এই দলের সাত সদস্য।

নৌ-পরিবহনের জন্যে  উদ্ভাবনী প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও নিরাপদ ফেরির নকশা করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের দল ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিওএফএসএ) দ্বাদশ মঞ্চ মাত করেছে তাদের নকশা করা ফেরি নাইজা স্পিরিট। 

ইন্দোনেশিয়ার শিপবিল্ডিং ইনস্টিটিউট অব পলিটেকনিক সুরাবায়া এবং আইটিএস ইন্দোনেশিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়াকে টপকে দেশের সুনাম ছড়িয়েছে এই দলের সাত সদস্য।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবায়ের ইবনে আওয়ালের তত্ত্বাবধানে দেশের জন্য এই গৌরব বয়ে এনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাফায়েত হোসেন শিশির, মো. আব্দুল কাদের, আবু রাসেল, মাহমুদুল হাসান শাহেদ, আফিফ বিন হাবিব অমিও, মো. আতিকুর রহমান ও মো. কাউসার মাহমুদ জিদান।  এদের মধ্যে দলনেতা আব্দুল কাদের স্নাতকত্তর করছেন।

আর বাকিদের মধ্যে শিশির, রাসেল, শাহেদ ও অমিও স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষে এবং আতিক ও জিদান তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। টানা তিন মাস ধরে এই সাত সদস্য মিলে তৈরি করেছেন পরিবেশবান্ধব, শক্তিসাশ্রয়ী ও টেকসই ফেরি। থ্রিডি Rhinoceros ব্যবহার করে নকশা করেছেন ভবিষ্যতের মালবাহী নৌযানের। এই কাজে তাদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. জোবায়ের ইবনে আওয়াল।      

প্রতিযোগিতার দ্বাদশ ও বুয়েটে চতুর্থ দল হিসেবে আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৫ হাজার মার্কিন ডলার প্রাইস মানি পুরস্কারও পেয়েছে দলটি। নকশাটি বাস্তবরূপ দিতে আনুমানিক খরচ পড়বে ১০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

পুরস্কারের অর্থ দিয়ে কম্পিউটারের উন্নয়ন, গবেষণার কাজে ইক্যুইপমেন্ট অস্বচ্ছল সদস্যদের ঋণ পরিশোধ এবং পরবর্তী গবেষণায় কাজে লাগাচ্ছেন বলে জানান এই দলে বয়ো জ‍্যৈষ্ঠ সদস‍্য আব্দুল কাদের। তিনি বললেন, প্রতিনিয়ত আমাদের গবেষণা চালিয়ে রাখতে সরকার যদি আর্থিক সহায়তা দেয় তবে এই অভিযাত্রা আরো বেগবান হবে।    

আলাপকালো জানা গেলো,  গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে এর ১২তম আসর। ফলাফল প্রকাশ করা হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয় ডিজাইন জমা দেয়ার কাজ। ফলাফল আসে ৯ ফেব্রুয়ারি। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ইন্দোনেশিয়ার শিপবিল্ডিং ইনস্টিটিউট অব পলিটেকনিক সুরাবায়া। আর যুগ্মভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আইটিএস ইন্দোনেশিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়া। এর আগে ১১তম, ১০ম এবং ৯ম আসরে টিম ব্ল্যাক পার্ল যথাক্রমে দ্বিতীয়, অনারেবল মেনশন এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল।

দলনেতা শিশির জানালেন, এ প্রতিযোগিতায় নির্দিষ্ট করা থাকে ফেরির রুট, যাত্রী সংখ্যা এবং ধরন। এবারের আসরে রুট ছিল নাইজেরিয়ার লাগোস শহরের অভ্যন্তরীণ জলপথ ইকোরোড টার্মিনাল থেকে সিএমএস। লাগোস নাইজেরিয়ার একটি অধিক জনবহুল শহর। অত্যধিক জনবহুল হওয়ার কারণে তাদের পরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত ব্যাঘাত ঘটে। এ সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যেই লাগোস শহরের ইকোরোডু থেকে সিএমএস ২৫ কিলোমিটার জলপথের জন্যে ফেরি ডিজাইন করাই ছিল মূল বিষয়বস্তু, যা একইসাথে ২০০ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম এবং বিদ্যুৎ দ্বারা পরিচালিত হতে হবে।

দলের আরেক সদস্য আফিফ বিন হাবিব জানান, টিম ব্ল্যাক পার্ল’র ডিজাইন করা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ দ্বারা পরিচালিত নাইজা স্পিরিট ফেরিটি নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি হালকা এবং দৃঢ় কাঠামোর জন্য ফেরির কাঠামোটিতে অ্যালুমিনিয়াম দেওয়া হয়েছে। ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ মিটার প্রস্থের দ্বিতল ক্যাটাম্যারান ফেরিটিতে প্রোপালশন সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে রিচার্জেবেল ব্যাটারি। তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে সৌর-বিদ্যুৎ এবং হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল থাকবে, যা পরিবেশে ক্ষতিকর গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে দিবে। রিচার্জেবল ব্যাটারিকে চার্জিং করতে সময় লাগবে ২৪ মিনিট। ডিজাইন অনুযায়ী একটি চার্জিং স্টেশন ইকোরোভু টার্মিনালে স্থাপনের জন্যে প্রস্তাব করা হয়েছে।

অপর সদস্য আতিক বললেন, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দীতার মাধ্যমে এমন একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য নিয়ে আসা এটাই প্রতীয়মান করে যে বুয়েটের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগ উদ্ভাবনী, প্রতিভাবান এবং দক্ষতা সম্পন্ন তরুন প্রকৌশলী তৈরি করছে, যারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক জাহাজ শিল্পের অভাবনীয় বিকাশ ঘটানোর সক্ষমতা রাখে এবং একই সাথে ওশান ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সাল থেকে ডব্লিওএফএসএ বিশ্বজুড়ে ফেরি দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে নিরাপদ ফেরি ডিজাইন ও পরিচালনার কাজ করে আসছে। বিগত কয়েক বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ফেরি ডিজাইন করা ছাড়াও পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উদ্দেশ্য করে ফেরি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, নিরাপদ ফেরি ডিজাইনের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্যেই এ সংস্থা প্রতিবছর একটি আন্তর্জাতিক ফেরি ডিজাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ১০৭ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর