বুধবার

ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ


খবর

কালীগঞ্জে পবিত্র যীশু হৃদয় ধর্মপল্লীর শতবর্ষের জুবিলী উদযাপন

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, সকাল ৮:৩৬

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

প্রধান অতিথি ঢাকা ক্যাথলিক আর্চডায়োসিসের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই এবং সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ গির্জা প্রাঙ্গণে স্থাপিত জুবিলীর বিশেষ স্মারক উন্মোচন করেন এবং শান্তির প্রতীক কবুতর অবমুক্ত করেন।

রাজধানী ঢাকার অদূরে ঐতিহ্যবাহী গাজীপুর জেলার ভাওয়াল অঞ্চলের কালীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত পবিত্র যীশু হৃদয় ক্যাথলিক ধর্মপল্লী, রাঙ্গামাটিয়া, প্রতিষ্ঠার গৌরবময় শতবর্ষ পূর্তি জুবিলী উপলক্ষে দুইদিনব্যাপী উৎসব পালন করা হয়েছে।  

শুক্রবার আড়ম্বরপূর্ণ জুবিলী অনুষ্ঠানের শুরু হয় সকাল ৮ টায় গির্জা প্রাঙ্গণে বাদ্য বাজনার মাধ্যমে। ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রাম থেকে খ্রিস্টভক্তগণ র‌্যালি করে এবং জুবিলীর স্লোগান দিতে দিতে গির্জা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা ক্যাথলিক আর্চডায়োসিসের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই এবং সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ গির্জা প্রাঙ্গণে স্থাপিত জুবিলীর বিশেষ স্মারক উন্মোচন করেন এবং শান্তির প্রতীক কবুতর অবমুক্ত করেন।

জুবিলীর বিশেষ খ্রিস্টযাগে (উপাসনা) প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই এবং তাকে সহায়তা করেন সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজ এবং ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ফাদার আলবিন গমেজ। উপাসনায় প্রায় ২০ জন যাজক, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সন্ন্যাসব্রতী ব্রাদার, সিস্টার এবং প্রায় ৫,০০০-র মতো খ্রিস্টভক্ত অংশগ্রহণ করেন।

আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই খ্রিস্টযাগে তার উপদেশ বাণীতে ভাওয়াল অঞ্চলে খ্রিস্টবাণী প্রচারের প্রবাদপ্রতিম প্রচারক দোম আন্তনীয়র অবদান সম্পর্কে আলোকপাত করেন এবং রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর ইতিহাস সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “রাঙ্গামাটিয়ার মানুষ অনেক উদার, আন্তরিক এবং অতিথিপরায়ণ। তাদের ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা, সে কারণে এ ধর্মপল্লী ধর্মীয় জীবনে আহ্বানের জন্য প্রসিদ্ধ।” ইতিহাসের সাক্ষ্য তুলে ধরে তিনি রাঙ্গামাটিয়ার খ্রিস্টানদেরকে “ইস্রায়েল জাতি”-র সাথে তুলনা করেন।

খ্রিস্টযাগের পর জুবিলীর বিশেষ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয় যেখানে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাতন্ত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্থান পেয়েছে। এরপর আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই এবং অতিথিবৃন্দ জুবিলীর বিশেষ কেক কাটেন এবং তা উপস্থিত সকলের সাথে সহভাগিতা করা হয়।

মিশনের পালপুরোহিত ফাদার আলবিন গমেজ তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, “জুবিলী একটি আশীর্বাদ ও সুযোগ। জুবিলীর চেতনায় যেন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিলন সমাজ গঠন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।” তিনি জুবিলী অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য সকলকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।

এরপর উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এবং রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর বর্তমান এবং প্রাক্তন পাল পুরোহিতদের বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

সেদিন বিকেলে ধর্মপল্লীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিভিত্তিক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় ধর্মপল্লীর শতবর্ষের ইহিহাস এবং ঐতিহ্যসম্বলিত একটি বিশেষ ডকুমেন্টারী প্রদর্শিত হয়। সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্যে ছিল আধুনিক গান, নৃত্য, ঐতিহ্যবাহী জারি গান, বৈঠকী গান, প্রায়শ্চিত্তকালীন কষ্টের গান, পল্লী গীতি, কবিতা আবৃত্তি, বড়দিনের কীর্তন এবং ফ্যাশন শো। সন্ধ্যা প্রার্থনার সময় খ্রিস্টভক্তরা শোভাযাত্রা করে মিশন কবরস্থানে গিয়ে বিগত একশত বছরে যারা পরলোকগমন করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।

শতবর্ষ পূর্তি উৎসবকে সামনে রেখে ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিতের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় জুবিলী কমিটিসহ ১২টির মতো উপ-কমিটি বেশ কয়েক মাস যাবৎ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।  

উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটিয়াতে খ্রিস্টধর্ম প্রথম প্রচার হয় ১৭শ শতকে ইউরোপীয় (পর্তুগিজ) মিশনারী এবং ভাওয়ালের প্রবাদপ্রতিম প্রচারক দোম আন্তনীয়র মাধ্যমে। এখানকার খ্রিস্টভক্তরা প্রথমে নাগরী এবং পরে তুমিলিয়া গির্জার অধীনে ছিল। পরে আলাদা গির্জা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে রাঙ্গামাটিয়া নতুন ধর্মপল্লী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে ধর্মপল্লীরখ্রিস্টভক্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৭০০-র বেশি।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৩০৭ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর


Card image

অনলাইন গেট পাস চালু হলো চট্টগ্রাম বন্দরে

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫