১৬ ঘন্টা আগে
১৭ ঘন্টা আগে
ছবি: টেকওয়ার্ল্ড
এই শিল্পকে রক্ষা করার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। যেমন, কিছু নামি-দামি গ্যালারি, বড় মিউজিয়াম, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, র ্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের মতো পাঁচ তারকা হোটেলগুলি যদি আমাদের এসব শিল্পকর্মগুলি কিনে নিতো, তাহলে ছবিগুলি একটা সুন্দর ও মানসম্পন্ন জায়গায় থাকতো। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে এসে আমাদের নান্দনিক শিল্পকর্ম দেখতে পারতো।
ছবি আঁকা এখন তার পেশা ও নেশা। সময় পেলেই বসে যান রঙতুলি নিয়ে। ছবিতে এই ঘুণে ধরা সমাজের পুরোনো, জীর্ণ ও জং ধরা ব্যবস্থাকে নতুন আঙ্গিকে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। নান্দনিকতার ছোঁয়ায় নতুন রূপে তুলে আনেন পুরোনোকে। নতুন এবং সুন্দরকে উপস্থাপন করাই তার নিত্যদিনের কাজ। শৈশব থেকে জীবনে এঁকেছেন অসংখ্য ছবি। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকতে পছন্দ করেন তিনি। তার আঁকা ছবি স্থান পেয়েছে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে।
এতক্ষণ যার কথা বলেছি তিনি হলেন চিত্রশিল্পী সরকার নাহিদ নিয়াজী (নিপু)। ‘ম্যানিফেস্টেশন’ (কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া) বিষয়ে ২ জুন থেকে ঢাকার ধানমন্ডিতে আলিয়ান্স ফ্রসেসে তার ষষ্ঠ একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু হয়। শেষ হয় ১৩ জুন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। প্রদর্শনীতে তার মোট ২৫টি শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে করা এই কাজগুলো ক্যানভাস, কাঠ এবং কার্টনের (বক্স) উপর অ্যাক্রেলিক মাধ্যমে করা। এর আগে দেশ-বিদেশে তার আরও পাঁচটি একক প্রদর্শনী হয়েছে। সমকালীন এই শিল্পীর গ্রুপ প্রদর্শনী হয়েছে প্রায় ২৬টি। একক প্রদর্শনী হয়েছে ৬টি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ৭টি পুরস্কার।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আলিয়ান্স ফ্রসেসে আয়োজিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর শেষ দিনে টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মুখোমুখি হন চিত্রশিল্পী সরকার নাহিদ নিয়াজী। একান্ত আলাপে জানালেন তার চিত্রশিল্পী হয়ে উঠার পেছনের গল্পসহ সমসাময়িক চিত্রশিল্পকর্মের নানান বিষয়। দীর্ঘ আলাপের চুম্বক অংশ টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।
টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: শিল্পকর্মে আসার পেছনের গল্পটা জানতে চাই। কখন থেকে ও কেন আপনার এ ধরনের কাজ করার ইচ্ছে হল?
সরকার নাহিদ নিয়াজী: ছোটবেলা থেকেই আমি ছবি আঁকতে ভীষণ পছন্দ করতাম। সেই ছেলেবেলায় স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকতাম। ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক দেখে আমার মায়ের খুব ইচ্ছে হলো, আমি বড় হয়ে যেনো অনেক বড় চিত্রশিল্পী হই। তাই শৈশব থেকেই মা আমাকে বিভিন্ন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাতো। আমিও বিষয়গুলো এনজয় করতে শুরু করি। শিশুদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করা কচি-কাঁচার মেলায় নিয়মিত যেতাম। বিভিন্ন ধরনের কাজ করতাম। এভাবেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের পড়াশোনাটা শেষ করি। পরে মা-ই সিদ্ধান্ত নিল অমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতে ভর্তি করাবে। কোচিং করি। প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেই। চান্স পেয়ে যাই।নিজের ও মায়ের ইচ্ছে, দুটো মিলিয়ে চিত্রশিল্পী হওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে শুরু করি।
শিল্পকর্মগুলির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে আমার তৈরি ফর্মগুলো। একই সঙ্গে উঠে এসেছে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, চিত্রশিল্পগুলি তৈরি করা হয়েছে সম্পর্ক তৈরির জন্য। আমার শিল্পকর্মগুলো উপযোগিতা ও নান্দনিকতার মধ্যে যেমন সম্পর্ক তৈরি করে, তেমনি শিল্পের সাথে বাস্তব জীবনের সম্পর্কও নতুন আলোতে দেখতে সহযোগিতা করে।
টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: সবাই তো ক্যানভাসে ছবি আঁকেন। আপনি কাঠকে বেছে নিলেন কেন?
সরকার নাহিদ নিয়াজী: চারুকলাতে পড়াশোনার শুরুতে ক্যানভাসে উড বা কাঠ আঁকতাম। আঁকা ছবিতে থ্রিডি ইফেক্ট নিয়ে আসতাম। উডের বিভিন্ন কম্পোজিশন করতাম। নিজের স্টাইলে কাজ করতাম। এভাবে কাজ করতে করতে একটা সময় এসে চিন্তা করলাম, ক্যানভাসে তো সবাই কাজ করে, আমি নিজেরও করি। এখন আমি যদি অন্যরকম, ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন কিছু করি, তাহলে কেমন হয়? যেমন, আমার ছবিতে যদি আমাদের চারপাশের ঘুণে ধরা, পুরোনো, জীর্ণ ও জং ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে নতুন আঙ্গিকে রূপ দিতে পারি, তাহলে সৃষ্ট শিল্পকর্মের মাধ্যমে মানুষকে ভিন্নভাবে একটা ম্যাসেজ দেয়া সম্ভব হতে পারে। সেই ভাবনা থেকে উডের উপরে কাজ করার চিন্তা করি। তখনই উডের উপরে ডাইরেক্ট কালার কম্পোজিশন সেট করি। এভাবে সমাজের বাস্তবধর্মী ও দার্শনিক চিন্তা-ভাবনাগুলো চিত্রশিল্পে রঙ ও তুলির ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। পুরোনো, জীর্ণ কাঠের মত কঠিন ও রসহীন জিনিসকে রঙ ও তুলির আচড়ে নিজের চিন্তায় বাস্তব সমাজের ছবিতে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় বিষয়ে পরিণত করে তুলি। আমি চেষ্টা করি আমার আঁকা ছবি রঙ ও রূপের মধ্যে রেখে চিত্রশিল্পের সীমারেখা নির্ধারণ করার।
এ প্রদর্শনীতে ২৫টি শিল্পকর্ম রয়েছে। এগুলির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে আমার তৈরি ফর্মগুলো। একই সঙ্গে উঠে এসেছে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, চিত্রশিল্পগুলি তৈরি করা হয়েছে সম্পর্ক তৈরির জন্য। আমার শিল্পকর্মগুলো উপযোগিতা ও নান্দনিকতার মধ্যে যেমন সম্পর্ক তৈরি করে, তেমনি শিল্পের সাথে বাস্তব জীবনের সম্পর্কও নতুন আলোতে দেখতে সহযোগিতা করে।
টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: আপনি ব্যতিক্রমী জীবন দর্শন নিয়ে ছবি আঁকছেন। এসব শিল্পকর্মের ক্রেতা কারা?
সরকার নাহিদ নিয়াজী: দেখুন, চিত্রশিল্পটা একটা ভিন্নমাত্রার বিষয়। এটার গুরুত্ব, মর্যাদা সবাই বোঝেন না। একটা ছবির ভেতরে যে গভীর ও নান্দনিক শিল্পদর্শন থাকে, এটা বোঝার সক্ষমতা সবার থাকে না। এসব জানার ও বোঝার জন্য পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হয়। একটা সাংস্কৃতিক চেতনা ও মন থাকতে হয়। সঙ্গত কারণে একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষেরা এসব শিল্পকর্ম কিনে থাকেন। যেমন, যারা চিত্রশিল্পকে মনে-প্রাণে ধারণ করেন, ভালোবাসেন, এমন সব ছবিপ্রেমীরা নতুন নতুন শিল্পগুলোকে সংগ্রহ করে থাকেন। তাছাড়া এগুলি বিদেশিরা বেশি কিনে থাকেন।
আমি যখন কোনো ভালো ছবি আঁকি, তখন যারা সাধারণত ছবি কিনে থাকেন, তাদের নক করি। এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন চিত্রশল্পীদের গ্রুপ আছে। ছবি বেচা-কেনার গ্রুপগুলোতেও যারা ছবি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাদের আমার ছবির বিষয়ে জানাই। যোগাযোগ করি। আমার দীর্ঘ ছবি আঁকা ক্যারিয়ারে যেসব বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী তৈরি হয়েছে, তাদেরসহ সব ধরনের নেটওয়ার্কেই আমার কাজগুলো নিয়ে জানানোর চেষ্টা করি। এভাবেই মূলত আমার তৈরি শিল্পকর্মগুলি বিক্রি হয়ে থাকে।
টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: বর্তমানে এধরনের শিল্পচর্চাটা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর কারণ কি?
সরকার নাহিদ নিয়াজী: শিল্প-সাহিত্য চর্চা হলো মনের বিষয়। এটা মনের ভেতর থেকে আসে। এটা দিন দিন কমে যাচ্ছে বিষয়টা আমি একটু ভিন্নভাবে দেখি। যুগ যুগ ধরে মানুষের মননশীলতা বিকাশে সৃজনশীল মানুষেরা শিল্প-সাহিত্যচর্চা করে আসছে। আর এখনও করছে। তবে এটার ধারাবাহিকতা রক্ষা করাটা নির্ভর করে পারিবারিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধের শিক্ষার বিষয় থেকে। পরিবার হলো শিল্প-সাহিত্যচর্চার প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাবা-মা যদি সাংস্কৃতিকমনা হয়ে থাকে, পারিবারিকভাবে যদি একজন ছোট শিশুকে নাচ, গান-বাজনা, ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখেন, তাহলে বড় হয়ে ওই শিশুটি সাংস্কৃতিকমনা হয়ে বড় হয়। পরে শিল্প-সাহিত্যচর্চার প্রতি মনের টান অনুভব করে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি ওই শিশুটি এসব সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠে।
এখন আমি যদি অন্যরকম, ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন কিছু করি, তাহলে কেমন হয়? যেমন, আমার ছবিতে যদি আমাদের চারপাশের ঘুণে ধরা, পুরোনো, জীর্ণ ও জং ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে নতুন আঙ্গিকে রূপ দিতে পারি, তাহলে সৃষ্ট শিল্পকর্মের মাধ্যমে মানুষকে ভিন্নভাবে একটা ম্যাসেজ দেয়া সম্ভব হতে পারে। সেই ভাবনা থেকে উডের উপরে কাজ করার চিন্তা করি। তখনই উডের উপরে ডাইরেক্ট কালার কম্পোজিশন সেট করি। এভাবে সমাজের বাস্তবধর্মী ও দার্শনিক চিন্তা-ভাবনাগুলো চিত্রশিল্পে রঙ ও তুলির ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। পুরোনো, জীর্ণ কাঠের মত কঠিন ও রসহীন জিনিসকে রঙ ও তুলির আচড়ে নিজের চিন্তায় বাস্তব সমাজের ছবিতে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় বিষয়ে পরিণত করে তুলি।
তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে এখন পারিবারিকভাবেই শিশুদের সাংস্কৃতিক বিষয়গুলিকে গুরুত্ব কম দেয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালেও গ্যালারিতে ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হলে অনেক তরুণ-তরুণীরা আসতো। ঘুরে ঘুরে ছবি দেখতো। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সবাই এখন মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারে গেম খেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছাড়াও বাবা-মায়েরাও সময় পেলেই ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, ইনস্ট্রাগ্রামে ছবি আপলোড করা, মেসেজ আদান-প্রদান করা, টিকটক ভিডিও বানানো, সেটা নেটে ছাড়া, ফেসবুকে লাইভ করা এসব নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পারিবারিকভাবে সংস্কৃতির চর্চার বদলে স্থান দখন করে নিয়েছে পশ্চিমা সংস্কৃতির চর্চা। এসব কারণে চিত্রশিল্পকর্মের চর্চাটা কিছুটা কমে গেছে।
আমার মনে হয়, যারা মন থেকে চিত্রশিল্পকর্মকে হৃদয়ে লালন করেন, ধারণ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আনন্দ খুঁজে পান, তাদের কাছে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবটা বেশি কাজ করে না। তারা ঠিকই প্রতিনিয়ত নতুন কিছু সৃষ্টির নেশায় মতে উঠেন। যেমন আমি নিজেই এটা অনুভব করি। আমার মতো যারা এমন সৃজনশীল কাজ পাগল মানুষ, মনে হয়, পৃথিবীর কোন শক্তিই হয়তো তাদের সৃষ্টিশীল কাজের এ নেশা থেকে আলাদা করতে পারবে না।
টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: এই শিল্পকে রক্ষা করার বা এর বিস্তারে করণীয় কী বলে মনে করেন?
সরকার নাহিদ নিয়াজী: আমার মতে এই শিল্পকে রক্ষা করার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। যেমন, কিছু নামি-দামি গ্যালারি, বড় মিউজিয়াম, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, র ্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের মতো পাঁচ তারকা হোটেলগুলি যদি আমাদের এসব শিল্পকর্মগুলি কিনে নিতো, তাহলে ছবিগুলি একটা সুন্দর ও মানসম্পন্ন জায়গায় থাকতো। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে এসে আমাদের নান্দনিক শিল্পকর্ম দেখতে পারতো। সারাদেশের মানুষেরা যারা এসব জায়গায় যেতো, তারাও দেখতে পারতো। ছবির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়তো। একটা শ্রেণির মানুষের কাছে ছবিগুলি পরিচিত হতো।
তাছাড়া সরকারিভাবেও ভাল ও মানসম্পন্ন কাজকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বছরে কয়েকবার করে এভাবে ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে। জাতীয়ভাবে তরুণ চিত্রশিল্পীদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক ছবি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। সরকারিভাবে এমন কি বেসরকারিভাবেও এটা আয়োজন করা যেতে পারে। তাহলে বিষয়গুলি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া চেতনাটা ফিরে আসতে পারে।
টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: বলা হয়ে থাকে চিত্রশিল্পর্মের দাম বেশি। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাহলে কি চিত্রশিল্প কেবল উচ্চবিত্তদর জন্য. . .
সরকার নাহিদ নিয়াজী: দেখুন, বিষয়টাকে আমি এভাবে বলতে চাই। আপনি যদি একটা ডায়মন্ডের হার কিনতে চান, তাহলে এটার দাম বেশি হবে। আবার স্বর্ণের হারের বেলায় কমে পাবেন। তাহলে চিত্রশিল্পটার মধ্যেও আবার বিভিন্ন ধরণ আছে। একেকটার মূল্য একেক ধরনের। তবে কম দামেও ছবি পাওয়া যাবে। যেমন তরুণ শিল্পীরা যেসব কাজগুলি করে থাকেন, সেগুলি বিষয় অনুসারে কম দামে পাওয়া সম্ভব। যেমন, ধরেন আমি একটা ছবি আঁকতে দুই থেকে তিন মাস সময় নেই। তাহলে আমার ৩০ বছরের ছবি আঁকা ক্যারিয়ারের সময়ের মূল্যটা একটা তরুণ চিত্রশিল্পীর চেয়ে অবশ্যই বেশি হবে।
ছবির বিষয়বস্তু, শিল্পদর্শন, ম্যাটেরিয়াল, সৃষ্টির সময়, পরিশ্রম, মেধা সব মিলিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কোন কোন ছবি আবার দুই দিনেও আঁকা হয়ে যায়। বিষয়বস্তু এখানে মূল কথা। তাই আমাদের মতো শিল্পীদের কাজগুলি একটু ক্ল্যাসিকেল ও ভিন্নমাত্রার করে থাকি। এর জন্য এসব ছবির দাম একটু বেশি। কম দামের ছবিও আছে। এই প্রদর্শনীতে ২৫টি ছবি রয়েছে। এগুলির দাম ৫০ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত।
টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: বলেছেন তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাবে তরুণ প্রজন্ম সৃজনশীল কাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এসব তরুণ-তরুণীদের ছবির প্রদর্শনীতে ফিরিয়ে আনতে করণীয় কী হতে পারে?
সরকার নাহিদ নিয়াজী: প্রথমত, তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীল কাজের প্রতি বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে হবে। এটা হতে পারে পারিবারিকভাবে, স্কুল-কলেজ থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রমে সভা-সেমিনার, প্রশিক্ষণ-কর্মশালার মাধ্যমে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ক্লাবের পক্ষ থেকে দেয়ালিকা, ম্যাগাজিন প্রকাশ ও ছবির প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেগুলিকে ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা নিজের ছবি নিয়ে ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করলে তারা বন্ধুদের দেখতে আসবে বলবে।
এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন ছবির গ্যালারিতে প্রায় প্রতি শুক্রবার ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন থাকে। সেখানে তারা যাতে যায় সেজন্য বেশি করে উৎসাহিত করতে হবে। এভাবে ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আবার হারানো চেতনাকে জাগ্রত করা সম্ভব হতে পারে।একটা সময় ছবির গ্যালারিতে তরুণরা আগের মতো ভিড় করবে বলে আমার বিশ্বাস।
টেকওয়াওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: ছবি আঁকাকে নিয়ে আপনার ভবিষ্যত ভাবনা জানতে চাই।
সরকার নাহিদ নিয়াজী: আমি ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকি। ভাললাগা থেকে ভালোবাসা। এখন এটা পেশা ও নেশায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয়ে ছবি আঁকছি। ক্যারিয়ারে অনেক সৃজনশীল কাজ করেছি। আরও অনেক দূর যেতে হবে। সবাই যে ধারার কাজ করছে আমি এর বাইরে গিয়ে ভিন্ন ধারার কাজ করছি। অনেক কাজ বাকি আছে। সেগুলি সম্পন্ন করতে চাই। অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে।
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন...