নেত্রকোনার উদ্যোক্তা শাহেরাসহ বিশেষ সম্মাননা পেলেন চার নারী

প্রকাশ: ১৬ মার্চ, ২০২৩, ১০:৪৪
Card image cap


টেকওয়ার্ল্ড প্রতিনিধি

উদ্যোক্তা হওয়ার বিশেষ কোন দক্ষতাই ছিল না তার। ছিল শুধু মনে অদম্য ইচ্ছা ও মানসিক শক্তি। এ দুটিকে সম্বল করেই নিজের ভাগ্যকে বদলে ফেলেন নেত্রকোনার আত্মপ্রত্যয়ী নারী শাহেরা আক্তার। তার এই অদম্য ইচ্ছা ও ভাগ্য পরিবর্তনের জীবনসংগ্রামকে সম্মাননা জানালো ই-কমার্স  অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর উইম্যান ফোরাম। 

বুধবার (১৫ মার্চ) ই-ক্যাব উইম্যান ফোরামের আয়োজনে রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে শাহেরা আক্তারসহ চার নারী উদ্যোক্তাকে এই বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। 

ই-ক্যাব উইম্যান ফোরামের সভাপতি নাজনীন নাহারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব রেজাউল করিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি)  আইডিয়া প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো. আলতাফ হোসেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব নাহিদ সুলতানা মল্লিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার ফারজানা খান।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উইম্যান ইন ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া নীলা, ইমাম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মালেয়া হোসেন, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান ও তাহুরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা হানিয়াম মারিয়া চৌধুরীসহ প্রমুখেরা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ই-ক্যাব প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার।  

এক নজরে  চার নারী উদ্যোক্তার জীবন কথা  

মনের বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তৌহিদা শিরোপা। মনের বন্ধু একটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। এখানে সব ধরনের মানসিক, সামাজিক, পারিবারিক সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ মনোবিদেরা। সব ধরনের গোপনীয়তা বজায় রেখে সেবা নেওয়ার সুযোগ থাকায় ২০১৬ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩১ হাজার মানুষ মনের বন্ধুর মাধ্যমে সরাসরি ও অনলাইনে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। পাশাপাশি গত ৫ বছরে বিভিন্ন কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইনে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে মনের বন্ধু।

অংকুর হ্যান্ডিক্রাফটের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী চুমকি বিশ্বাস। আড়াই মাস বয়সেই পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ছোটবেলা হতে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন চুমকি। সময়ের পালা-বদলে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শুরু করেন। সেখান থেকে বিজনেস সাইড নিয়ে তাকে আলাদা করে দেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সাল থেকে অংকুর হ্যান্ডিক্রাফট নিয়ে পথ চলা শুরু হয় তার। পাশে ছিলেন তার প্রতিবন্ধী বোন ও তার পরিবারের সদস্যরা। নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নিজে ব্যবসার জন্য সমস্ত কাঁচামাল কিনে হ্যান্ডিক্রাফট তৈরি করতেন। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আজ তিনি স্বাবলম্বী। পরিবারের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

স্বপ্ন পাখি বুটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী  শাহানা আক্তার পপি। এসএসসি পরিক্ষার পরপরই নিজের পছন্দে বিয়ে করেন।  নানান চড়াইউৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে কাটে ১২ বছরের সংসার জীবন। কোল জুড়ে আসে সন্তান। নিজ উদ্যোগে পড়াশোনা করে মাস্টার্স পাস করেন। পাশাপাশি শখের বসে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিয়ে বুটিক্স বিজনেস শুরু করেন। স্বামীর হেয়ালিপনা আর সংসার ধরে রখার যুদ্ধে কেটে যায় তার ১২বছর। না। তার সংসার জীবনে নেমে আসে চড়ম ভোগান্তি। এক পর্যায়ে তিনি চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন। ভাবেন কাজের জন্য দূরে গেলে হয়তো একটা সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিধি বাম। কিছুতেই কিছুই ঠিক হয়নি। সময়ের সাথে সাথে অশান্তিও বাড়াতে থাকে। সংসার জীবন থেকে মুক্ত হয়ে সন্তানসহ নতুন সংগ্রাম শুরু করেন। একটা সময় যুদ্ধ করে নিজের পায়ে দাঁতে সক্ষম হন। এখন তিনি ভাল আছেন।

মনিকা এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী  শাহেরা আক্তার। বিদ্যালয়ের বারান্দায় কখনও পা রাখা হয়নি তার। কোনরকমের নামটা সাইন করতে পারেন। জীবনের কিছু বুঝে উঠার আগেই বিয়ে হয় তার। শুরু হয় সংসার জীবন।দেখতে দেখতে ৩ সন্তানের মা হন তিনি। ভাগ্যদেবী তার প্রসন্ন হয়নি বেশি দিন। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে তার জীবনে নেমে আসে নানান শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। তখন নিজের পায়ে দাঁড়োতে শুরু করেন রিক্সা গ্যারেজের কাজ। গ্যারেজে কাজ করার পাশাপাশি শুরু করেন সেলাই শেখার কাজ। আস্তে আস্তে তিনি আরো সেলাই মেশিন কিনে গড়ে তোলেন টেইলার্স শপ। ঘুরে যায় তার জীবনের প্রেক্ষাপট। আজ গ্যারেজের পাশাপাশি শাহেরার নিজের বুটিকস শপ ও সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ২৪ বার