সিম্ফনির হাত ধরে সব শ্রেণির ক্রেতাদের কাছে যেতে চায় মোটোরোলা
প্রকাশ: ২ মে, ২০২৩, ১০:২৬
সাধারণ মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হচ্ছে বিনোদন। তাই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলার পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবটুকু বিনোদন উপভোগ করতে চায় তাঁরা। তাঁদের কাছে ফোন দুটি গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
একটা সময় মোবাইল হ্যান্ডসেট ছিল দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন কিনতে পারতেন না। তখন সিম্ফনির উদ্যোক্তাদের চিন্তা আসে কিভাবে কম দামে মানসম্পন্ন মোবাইল ফোন মানুষের হাতে তুলে দেয়া যায়। এই চিন্তা থেকে ২০০৮ সালে দেশের বাজারে যাত্রা শুরু হয় মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ড সিম্ফনির।
শুরু থেকেই সাশ্রয়ী দামের ফিচার ফোন দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে দেশীয় মোবাইল ব্র্যান্ডটি। তখন বাজারে নকিয়া, ব্ল্যাকবেরিসহ অন্যান্য ফিচার ফোন থাকলেও দুই বছরের মধ্যে সারা দেশের মার্কেট শেয়ারের বড় অংশজুড়ে স্থান করে নেয় সিম্ফনি ফোন।
২০১০-১১ সালে ফিনল্যান্ডের নকিয়া ফোনকে ছাড়িয়ে বিক্রির দিকে দেশের এক নম্বর ফোনের স্বীকৃতি পায় সিম্ফনি, যা সারাবিশ্বের মধ্যে লোকাল কোম্পানি হিসেবে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
সময়ের পালা-বদলে দিন দিন বাড়তে থাকে ক্রেতা ও গ্রাহকের সংখ্যা। বাজারে আসে স্মার্টফোন। ক্রেতাদের রুচি ও পছন্দের পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে ২০১২ সালের শেষের দিকে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রথম অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চালিত মোবাইল ফোন বাজারে নিয়ে আসে সিম্ফনি। সারা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে মাল্টিমিডিয়া ফোন পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয় সিম্ফনি।
ধারাবাহিকভাবে বাজারে আসে শাওমি, ওয়ালটন, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, অপো, উই, এলজি, এইচটিসিসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্র্যান্ড। শুরু হয় তুমুল প্রতিযোগিতা। গ্রাহকদের চাহিদার কথা চিন্তা করে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলির সাথে তাল মিলিয়ে বেশ কয়েকটি মডেলের স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ে সিম্ফনি। ফিচার ফোনের মতো স্মার্টফোনের মার্কেট শেয়ার ততটা দ্রুত না বাড়লেও সারা দেশের মানুষের কাছে দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে সিম্ফনির জনপ্রিয়তা কমে যায়নি। তবে সাশ্রয়ী মূল্যে মাল্টিমিডিয়া স্মার্টফোন দিয়ে সারা দেশের সাধারণ মানুষের বিনোদনের চাহিদা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যায় ব্র্যান্ডটি।
২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের সর্বাধিক বিক্রিত ব্র্যান্ড হিসেবে সিম্ফনি তার নেতৃত্ব ধরে রেখেছে। পাশাপাশি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম কর্তৃক মোবাইল ফোন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ ব্র্যান্ডের খেতাব অর্জন করে। ২০১৮ সালের শেষ দিকে এসে ঢাকার অদূরে সাভার আশুলিয়ার জিরাবোতে এডিসন গ্রুপের সিম্ফনি মোবাইল কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে দেশে সিম্ফনি মোবাইল অ্যাসেম্বলিং শুরু হয়।
২০২০ সালের শেষে কোম্পানিটি দেশে ফোনের মাদারবোর্ড উৎপাদন শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে নিজস্ব কারখানাতেই মোবাইল ফোন তৈরি করা হচ্ছে। বেশিরভাগ মোবাইল মাল্টিমিডিয়া সমর্থিত। কোনো কোনোটিতে জাভা অ্যাপ চালানোর সুবিধা থাকে। শুরুতে বেসিক ফোন বাজারজাত করলেও এখন সব মোবাইলই মাল্টিমিডিয়া সমর্থিত। সেসাথে ফিচার ফোনও বাজারজাত করছে।
যাত্রার শুরু থেকেই সিম্ফনির উদ্দেশ্য ছিল দেশের সব শ্রেণির ক্রেতারা যাতে সহজে মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলি কিনতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটি মটোরোলা মোবাইল ফোন কোম্পানির সাথে যৌথভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটা চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে মটোরোলার সঙ্গে এডিসন গ্রুপের এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তির আওতায় মটোরোলা সিম্ফনির মূল প্রতিষ্ঠান এডিসন গ্রুপের মোবাইল ফোন ফ্যাক্টরিতে হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারিং করে বাংলাদেশে বাজারজাত করবে।
এসময় মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য মোটোরোলা বাংলাদেশে তাদের নতুন দুইটি স্মার্টফোন বিক্রির ঘোষণা দেয়। এগুলির মডেল হলো, মোটো ই৩২ এবং মোটো ই২২এস। ই সিরিজ মোটোরোলার সবচাইতে সাশ্রয়ী এবং ফিচার সমৃদ্ধ স্মার্টফোন। ‘ডিজাইন মিট পারফরম্যান্স’ এই স্লোগান সামনে রেখে হ্যান্ডসেট দুটি উদ্বোধন করা হয়।
অত্যাধুনিক ডিজাইনের মোটো ই৩২ এবং মোটো ই২২এস হ্যান্ডসেট দুটি ইকো ব্ল্যাক এবং আর্কটিক ব্লু কালারে পাওয়া যাবে যথাক্রমে ১৫ হাজার ৯৯৯ এবং ১৪ হাজার ৯৯৯ টাকায়।
হ্যান্ডসেট দুটি উদ্বোধন করেন এডিসন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকারিয়া শাহিদ, হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং আবু সায়েম, মোটোরোলা ইন্ডিয়ার বিজনেস হেড হরিয়ম কুমার মিশ্রা এবং চিত্রনায়ক রিয়াজ। এসময় এডিসন গ্রুপের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
হ্যান্ডসেট (মোটোরোলা) উদ্বোধনে মোটোরোলাকে নিয়ে এডিসন গ্রুপের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জবাবে এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শাহিদ জানান, স্মার্টফোন উদ্ভাবনে সিম্ফনির আছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল কারখানা। বাংলাদেশে স্মার্টফোন নির্মাণের সক্ষমতা আমাদের আছে। শুধু মোবাইল উৎপাদন নয়, আইটির যে কোনো পণ্য নির্মাণ নিয়ে ভাবছি। মোটোরোলা ব্র্যান্ডের জন্য এডিসন গ্রুপ আলাদা প্রডাকশন লাইন প্রস্তুত করেছে। সরকার ডিজিটাল পণ্য নির্মাণে সুবিধা ও কর্মসংস্থান তৈরির কথা বলেছে। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে এডিসন গ্রুপ। বাংলাদেশে মোটোরোলা ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদনে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে। তা ছাড়া নিজেদের সক্ষমতাও যাচাই করার সুযোগ নিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে মোটোরোলা ইন্ডিয়ার বিজনেস হেড হরিয়ম কুমার মিশ্রা জানালেন, বাংলাদেশে নিজেদের আরও সুপরিচিত করতে মোটোরোলা ব্র্যান্ডের বন্ধু হলো এডিসন গ্রুপ। নিজস্ব ব্র্যান্ডের উপস্থিতি আরও সুপরিচিত করতে সিম্ফনি আউটলেটে মোটোরোলা ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনও এখন সহজলভ্য হবে।
ফোন দুটির অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আছে অ্যান্ড্রয়েড ১২। ৯০ মেগাহার্জ রিফ্রেশরেটের হ্যান্ডসেট দুটিতে আছে ৬.৫ ইঞ্চ আইপিএস এল সি ডি পাঞ্চ হোল ডিসপ্লে যার রেজ্যুলেশন এইচডি প্লাস বা ৭২০*১৬০০। ২.৩ গিগাহার্জের পাওয়ারফুল এবং পাওয়ার অ্যাফিসিয়েন্ট অক্টাকোর প্রসেসর মিডিয়াটেকের জি৩৭ ১২ ন্যানো মিটার চিপসেট এবং সাথে আছে হাইপার ইঞ্জিন প্রযুক্তি।
৪ জিবি ডিডিআরফোর র্যামের সাথে ইন্টারনাল স্টোরেজ আছে ৬৪ জিবি, যা এসডি কার্ডের মাধ্যমে বাড়ানো যাবে ১ ট্যারাবাইট পর্যন্ত। পাওয়ারফুল চিপসেট থাকার কারণে এসফল্ট এইট, কল অব ডিউটির মতো হাই ডিমান্ডিং গেমগুলো খেলা যাবে অনায়াসে।
সুন্দর ছবি তোলার জন্য মোটো ই৩২ এবং মোটো ই২২এস ফোন দুটিতে যথাক্রমে আছে ৫০ মেগাপিক্সেল এবং ১৬ মেগাপিক্সেলের এআই সমৃদ্ধ ডুয়াল রিয়ার পিডিএফ ক্যামেরা। দুটি ফোনের সেলফি ক্যামেরাতেই থাকছে ৮ মেগাপিক্সেল সেলফি শ্যুটার যা দিয়ে তোলা যাবে প্রাণবন্ত সব ছবি।
পাওয়ার ব্যাকআপ দিতে এতে আছে ৫ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি, যা দিবে অনায়াসে দিন পার করার নিশ্চয়তা। দুটি ন্যানো সিমের পাশাপাশি মেমোরি কার্ডও ব্যবহার করা যাবে হ্যান্ডসেট দুটিতে। এছাড়াও হ্যান্ডসেট দুটির সিকিউরিটি দিতে আছে সাইড মাউন্টেড ফিংগারপ্রিন্ট সুবিধা এবং ফেস আনলক। প্রয়োজনীয় সকল সেন্সর যেমন, জি সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর, লাইট সেন্সর এবং অ্যাক্সালেরো মিটার রয়েছে ফোন দুটিতে।
সাধারণ মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হচ্ছে বিনোদন। তাই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলার পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবটুকু বিনোদন উপভোগ করতে চায় তাঁরা। তাঁদের কাছে ফোন দুটি গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সাশ্রয়ী মূল্যের এই স্মার্টফোনের মাধ্যমে তাঁরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বা মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে ইউটিউব প্লাট ফর্মে নাটক, সিনেমা, গান শুনতে পারবেন। অন্যদিকে স্কুল-কলেজের স্টুডেন্টরা অনলাইনে ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট করতে পারবেন।
মোটোরোলা ফোন দুটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সিম্ফনি আবারও সারা দেশের সব শ্রেণির ক্রেতার খুব কাছে চলে যেতে সক্ষম হবে। সেসাথে তাঁদের বিনোদন থেকে শুরু করে ফোনের চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে মডেল দুটি।
সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ১৫৮ বার
সম্পর্কিত পোস্ট
মুখোমুখি

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ইকুইপমেন্টে ভ্যাট, ট্যাক্সের করবোঝা নামাতে হবে
সময়ের পালা-বদলে বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল যুগ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।