বুধবার

ঢাকা, ২৬ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ


টেলিকম

ইন্টারনেট মানুষের মৌলিক অধিকার, বিশেষ কারণেও এটি বন্ধ হওয়া অপ্রত্যাশিত

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দুপুর ১২:০৮

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

জরুরি পরিস্থিতির নামে বিগত সময়ে যেভাবে ইচ্ছে মতো ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হতো, এখন কে বা কারা সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) বা পদ্ধতি তৈরির কথা বলছে?

বিটিআরসি বলছে, জরুরি পরিস্থিতি বা বিশেষ অবস্থায় ও  ইন্টারনেট বন্ধ করার পক্ষে  নয় তারা। অপরদিকে,  ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলছে, ইন্টারনেট নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এটি কোনো অবস্থাতেই বন্ধ হওয়া প্রত্যাশিত নয়। 

তাহলে জরুরি পরিস্থিতির নামে বিগত সময়ে যেভাবে ইচ্ছে মতো ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হতো, এখন কে বা কারা সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) বা পদ্ধতি তৈরির কথা বলছে?

বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে বলছে, বর্তমানে ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচ্য। তাই এই সেবাটি বন্ধ করার সুযোগ না থাকাই কাম্য। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের প্রয়োজন দেখা দিলে এ বিষয়ে আদেশ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট বন্ধের সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও আঙ্গিক বিটিআরসিকে জানালে তা বাস্তবায়নে এসওপি এর খসড়া তৈরি করা যেতে পারে।

ইন্টারনেট বন্ধের এসওপি বা ইন্টারনেট বন্ধ করার নির্দেশ বাস্তবায়নের একটি পদ্ধতি তৈরি করতে হবে এমন ভাবনা প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী  বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদেরকে একটা কথা বলা হয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধের ব্যাপারে এসওপি তৈরি করতে। এটার যে রিপ্লাইটা আমরা পাঠাচ্ছি, আমরা বলতে চাচ্ছি-ইন্টারনেট বন্ধ হোক এটা কাম্য না, এটা আমরা চাই না। এটা আমরা লিখিতভাবে পাঠাচ্ছি মন্ত্রণালয়ে।’

এই  প্রসঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার পলিসি এডভাইজার (সমন্বয় এবং সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব   বলেন, ‘ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামও এমন কোনো নির্দেশনা দেননি। আমরা কোনো অবস্থাতেই ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নই। বরং ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে রাখতে চাই।’

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট পাওয়ার অধিকারের বিষয়টি রাখা হয়েছে। আমরা ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার হিসেবে চাই। তবে এখনও যেহেতু স্মার্টফোন প্রেনিট্রেশন কম, ইন্টারনেটের ব্যবহার বহুলাংশে পৌঁছাইনি তাই পরিপূর্ণ আইনগত ভিত্তি দেয়া যাচ্ছে না। আমাদের এ নিয়ে পরিকল্পনা আছে। আশাকরি ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করতে অনেক বেশি দেরী করতে হবে না আমাদের।’

তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ হতে এ ধরনের কোনো কিছুর সুযোগই নেই। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম অবাধ তথ্যপ্রবাহে বিশ্বাস করেন এবং গণমানুষের যোগাযোগ ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে দ্ব্যর্থহীন।’  

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউনে নিয়ে করা তদন্ত প্রতিবেদেনে বিটিআরসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু সুপারিশের প্রেক্ষাপটে বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। ওই সংক্রান্ত একটি চিঠি ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পায় বিটিঅরসি।

যেখানে সুপারিশের মধ্যে ছিল, ‘ইন্টারনেট ব্যবহারে বিঘ্ন সৃষ্টি করা বা বন্ধ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক না কেন, সরকার বা যেকোনো কর্তৃপক্ষের একযোগে দেশব্যাপী বা দেশের অধিকাংশ এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ বা সীমিত করার ক্ষমতা নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এ পরিমার্জন করে রাখা যেতে পারে।’

‘বিদ্যমান আইনে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অথবা আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে ইন্টারনেট বা টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ বা সীমিত করার যে সকল বিধি রয়েছে, সে সকল বিধিমালা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরও পর্যালোচনা করে টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ, স্থগিত বা সীমিত করার ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা।’

‘বিটিআরসিকে জরুরি পরিস্থিতিতে এবং কারিগরি প্রয়োজন বিবেচনায় টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ, স্থগিত বা সীমিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে একটি এসওপি প্রণয়নে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

এরপর বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে জানায়, ‘নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে জরুরি পরিস্থিতিতে এবং কারিগরি প্রয়োজন বিবেচনায় টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ, স্থগিত বা সীমিত করার বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নেতৃত্বে বিটিআরসি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা যেতে পারে। এই কমিটি এসওপি প্রণয়নের ব্যবস্থা নেবে।’

এবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিটিআরসিকে জানায়, ‘জরুরি পরিস্থিতিতে এবং কারিগরি প্রয়োজন বিবেচনায় টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ, স্থগিত বা সীমিত করার এসওপির খসড়া তৈরি করে যেন তাদেরকে পাঠানো হয়।’ বিটিঅরসি তখন সর্বশেষ তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়।

মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি মনে করে জরুরি বিবেচনায়, অন্যান্য মৌলিক অধিকার যেগুলো আছে, যেমন পানি-বিদ্যুৎ এগুলো তো মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। ইন্টারনেটও আমি মনে করি সেরকম একটা জিনিস। জরুরি ক্ষেত্রে যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, এটা বন্ধ করতে হবে, তবে সেক্ষেত্রে সরকার যদি আমাদের দুটি জিনিস জানায়- এক. এই জরুরি পরিস্থিতিতে কী ধরনের আঙ্গিকে এটা বন্ধ হতে পারে। দুই. আমাদের যে আদেশ দেওয়া হবে সেই অথরিটিটা কী, কেমন করে আদেশ দেবে। এই দুটি জিনিস যদি আমাদের জানানো হয়, তাহলে তা বাস্তবায়নের এসওপি কী হতে পারে, সেটা হয়তো আমরা বলতে পারবো। কিন্তু এখন যেভাবে ওনারা বলছেন, বন্ধের এসওপি পাঠান-এই এসওপি আমরা পাঠাতে পারবো না।’

মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী আরও বলেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধ হোক এটা আমার কাম্য না। আমি ইন্টারনেট বন্ধ করব না। আর যদি সরকার মনে করে, হ্যাঁ, আই আন্ডারস্ট্যান্ড-অনেক সময় সিকিউরিটির বিষয়-আশয় হতে পারে। কিন্তু আমরা তো সিকিউরিটি অ্যাজেন্সি না। তাহলে সরকার সিকিউরিটির পয়েন্ট অব ভিউ হতে বলে দিক এই ধরনের আঙ্গিকে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে ওমুক আপনাকে বলবে এবং তার কথা আপনি শুনবেন। এটা বলুক, বললে কেমন করে আমি শুনবো আমি সেটার এসওপি বানাবো।’  

বিগত ১৬ বছরে নানা সময়ে আন্দোলন-বিক্ষোভ দমনে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার বড় অভিযোগ ছিল সরকারের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ইতিহাসের ভয়াবহ ডিজিটাল ক্র্যাকডাউনে পড়ে বাংলাদেশ। জুলাইয়ের শেষ ১৫ দিন  ডিজিটাল দুনিয়া হতে যেন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বাংলাদেশকে। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন একাধিকবার দেশব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউন হয়। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয় এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।

এরপর বাংলাদেশের নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী। অধ্যাদেশের ২(ভ) ধারা অনুযায়ী ‘নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকার সাইবার সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত হবে।’

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৮৪ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর